শাল বনের ছায়া || ভুতের গল্প || Bongo Pulse

শাল বনের ছায়া 




১৯৯৪ সালে চৈত্র মাস। দিনাজ পুরের প্রত্যন্ত একগ্রাম রহিমপুর। সেই খানেই ঘটে যাই এই অদ্ভুত ঘটনা।আমি সরাসরি ঘটনায় চলে যাচ্ছি।গ্রামের ঘরে তখনো বিদ্যুৎ আসে নি। সন্ধ্যার পর কুপির আলো আর ভোরে উঠি মাঠে যাওয়াই ছিলো দিনাজপুরের রহিম পুর গ্রামের রুটিন।আবির সাহেব আর রুবিনা তখন নতুন বিয়ে করেছেন।সংসারে টানাটানি কিন্তু ভালোবাসার অভাব নেই।আবির সাহেব ছিলেন কৃষক জমিতে পাঠ চাষ করতেন।আর সেই পাঠ শুকাতে হলে ভোরের আগেই খালের ঘাট থেকে টেনে আনতে হতো। খালটা ছিলো একটু দুরে।প্রায় ৩০ মনিট হাটতে হতো। তার মাঝে একটা ছোট নদি আর পাশেই একটা পুরোনো শালবোন ঘন অন্ধকার। 

গ্রামের মানুষ বলতেন ভোরের আযানের আগে  ওই শালবনের দিকে ভুত ও ভয়ংকর জিন পরি ঘুরে বেড়ায়।আবির সাহেব এসব বিশ্বাস করতেন না।কিন্তু রুবিনা ভয় পেতেন।সামির সঙ্গে গেলে তিনি একটু সাহস পেতেন।চৈত্র মাসের এক ভোর রাতে সূর্য  ওঠার প্রায় ১ ঘন্টা আগে দুজন রওনা দিলেন পাঠ আনতে।সেই সময়টায় গ্রামের পথ ফাঁকা। শুধু রাতের হাল্কা ঠান্ডা আর ঘুমন্ত পাখির শব্দ। তারা পৌঁছে গেলেন নদীর ঘটে নৌকা  ছিলো বাধা।আবির সাহেব তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন ,তুমি বসো আমি গিয়ে পাঠ নিয়ে আসি।রুমিনা বোসে পড়লেন নৌকায়। অন্ধকারে বসে থাকাটা সহজ ছিলো না।পাশেই ছিলো শাল বোন ।  যার গায়ে সারা বছরি একটা ছায়া ছায়া ভাব। একসময় রুবিনা দেখেছেন একটা শাল গাছের মোটা ডাল অসাভাবিক ভাবে কাপছে। বাতাস নেই চারপাশে শব্দ নেই। অথচ ওই ডাল যেনো কারো ইচ্ছায় দুলছে।রুবিনা ভয় পেলেন কিন্তু নিজেকে সামলেও নিলেন।কিছুক্ষণ পরে শুনেন কারও পায়ের শব্দ। পেছনে তাকিয়ে দেখেন আবির সাহেব ফিরছেন। হাতে পাটের বোঝা,গায়ে কাদা কিন্তু মুখটা যেনো কিছুটা অচেনা।বেশ অসাভাবিক। চোখ ছিলো টকটকে লাল।রুবিনা জিজ্ঞাস করলেন চোখ এতো লাল কেনো তোমার? 

শাল বনের ছায়া ভুতের গল্প


আবির সাহেব কিছু না বলে নৌকা ছেড়ে দেন।নৌকা মাঝ নদীতে চলে এলো। চারপাশে নিস্তব্ধতা। হঠাৎ রুবিনা শুনেন কারো কন্ঠে তার নাম।রুবিনা রুবিনা।পেছনে তাকিয়ে দেখেন ঘাটে দাঁড়িয়ে আছেন আবির সাহেব।রুবিনা স্তব্ধ হয়ে গেলেন। তাহলে নৌকায়  যে লোকটা বসে আছে সে কে।তিনি তখন লোকটার দিকে তাকালেন।সে হাসতে লাগলো। কিন্তু সেই হাসি মানুষের নয়।একটা শীতলগলার ভিতর কেউ কেপে উঠা ভয়াবহ হাহা কার। রুবিনা কিছু না ভেবে পানিতে যাপ দেন।ঠান্ডা জলে সাতরে কোন রকমে  ঘাটে উঠেন। উঠেই দৌড়ে বাড়ি ফেরেন।আবির সাহেব তখনও ফেরেননি। পরদিন ভোরের আলো ফোটার পর আবির সাহেব বাড়ি আসেন।পাটের বস্তা কাধে ,পায়ে কাদা।তাকে দেখে রুবিনা কান্নায় ভেঙে পরেন।আবির সাহেব বললেন নৌকা তো পাই নাই।পাড় হতে দেরি হয়েছে। তুমি ফিরলে কিভাবে।রুবিনা তখন সব খুলে বললেন। ঘটনা শুনে বাড়ির সবাই স্তম্ভিত। রুবিনাকে পরডিন হুজুর ডেকে ঝারফুক করেন।রুবিনা পড়ে বহুদিন অসুস্থ ছিলেন।ঘাটে আর কখনো যান নি।



সমাপ্ত


Post a Comment

0 Comments